শেখ আজমল হুদা, সময় প্রতিদিন:
নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে জাহিদুল ইসলাম পারভেজের পরিবার, পাশে থাকার আশ^াস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে ময়মনসিংহের ভালুকার বিরনীয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামে পারভেজের বাড়িতে তার কবর জিয়ার শেষে সাংবাদিকদের তিনি এই কথা বলেন।
এই সময় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকান্ডে জড়িত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের যাতে আসামী করা না হয়, সেই জন্য তারা বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। আমরা যখন বললাম পারভেজ হত্যাকান্ডের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জড়িত, তখন তারা একটি প্রেসকনফারেন্স করে বললেন, আমরা উদ্দ্যেশ্য প্রণোদিতভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নাম জড়িয়েছি। পরে যখন সিসি টিভির ফুটেজ প্রকাশ হলো এবং দেখাগেলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন নেতা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, আরও কয়েকজন আশপাশে অবস্থান করছেন। এরপর তারা আর কিছু বললেন না। একটি হত্যাকান্ড নিয়ে এমন মিথ্যাচার করা তাদের ঠিক হয়নি। তিনি দাবী করেন, যে দুটি মেয়ে নিয়ে হত্যাকান্ডের সূচনা তাদের খোঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, পারভেজের পরিবারের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। পারভেজের ছোট বোন মাইলস্টোন কলেজে পড়–য়া ছাত্রী নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন, আমাদের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন। কিন্তুু নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, অবশ্যই তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে হবে। আমরা আশ^াস দিয়েছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সর্বদায় তাদের পাশে থাকবে।
ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ আসার সংবাদ পেয়ে সকাল থেকে শত শত নারী পুরুষ খন্ড খন্ড বিক্ষোভ মিছিলসহ পারভেজের বাড়িতে জমায়েত হয়। এসময় তারা পারভেজের হত্যাকারীদের দ্রুত ফাঁসির দাবী জানান।
পারভেজের মামা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন বনানী থানায় আমার ভাগিনার হত্যার মামলা করতে গেলাম, তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদলের নেতারা মামলা না করার জন্য আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিল। এখনো হুমকি অব্যাহত আছে। আমরা এখন নিরাপত্তা হীনতাহীনতায় ভূগছি।
পারভেজের জ্যেঠা শামছুল হক বলেন, আমার ভাতিজার মতো ভালো মানুষ আমাদের গ্রামে নাই। আমরা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।
পারভেজের বোন তাহমিনা আক্তার জুই বলেন, আমার ভাই কবরে হত্যাকারীরা কেনো বাহিরে? হত্যাকারীদের প্রকাশ্য ফাঁসি চাই।
পারভেজের মা পারভীন আক্তার বিলাপ করে বলেন, আমার পুত্রের কি দোষ ছিল, কেন নিষ্পাপ ছেলেকে মারলো, যদি এর বিচার না পাই, তাইলে আমার পুতেরে যেখানে মারছে সেখানে আমাদের পরিবারের তিন জনকে মেরে ফেলুক।
পারভেজের পিতা জসিম উদ্দিন ছেলের হত্যাকারীদের জনসন্মুখে প্রকাশ্য ফাঁসির দাবি করেন। তিনি বলেন, আমার মেয়েকে আর ঢাকা দিব না, ভয় লাগে, কখন জানি কি হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রানা, সাধারণ সম্পাদক আবু দাউদ রায়হান, মহানগর সভাপতি নাইমুল করিম লুইন, সাধারণ সম্পাদক রবিন, উত্তর জেলা সভাপতি দোলন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নাসির উদ্দিন সরকার, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান মামুন, আবদুর রহিম আকন্দ, লুৎফর রহমান খান সানি, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াদ পাঠান, মিয়াদ খান, আলীরাজ, মৃদুল প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জাহিদুল ইসলাম পারভেজ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনীয়া ইউনিয়নের কাইচান গ্রামের কুয়েত প্রবাসী জসিম উদ্দিন ও মা পারভীন আক্তারের একমাত্র ছেলে। তিনি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর বনানীতে হাসাহাসির মতো তুচ্ছ বিষয় কে কেন্দ্রকরে ছুরিকাঘাতে তিনি নিহত হন। রোববার (২০ এপ্রিল) রাত ৯টায় গ্রামের বাড়িতে নামাজে জানাযা শেষে পারিপারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।